খেলাধুলা ডেস্ক জাতীয় লিগ, বিসিএলে ভালো করেও ফোকাসে ছিলেন না আবু হায়দার রনি। বিপিএলে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় ফেরেন রংপুর রাইডার্সের এ মিডিয়াম পেসার। বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও। গতকাল গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমির সাত উইকেট নেন মোহামেডানের এ বোলার। আসলে লিগের পুরো সময়ই বোলিং ভালো করছেন তিনি। বাঁহাতি এ পেসার জাতীয় দলে ডাকের অপেক্ষায়। আবু হায়দার রনির কাছ থেকে বোলিংয়ের নব-উদ্যমের গল্প শুনেছেন সেকান্দার আলী।
সমকাল: লিগে এভাবে বাজিমাত করার রহস্য কী?
রনি: হাসি…। কোনো রহস্য নেই। আলহামদুলিল্লাহ, চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করতে। সাত উইকেট পেয়ে ভালো লাগছে। খুবই ‘স্পেশাল পারফরম্যান্স’ এটি।
সমকাল: আপনি কি জানেন, এ ম্যাচে একটি রেকর্ড হয়েছে?
রনি: সবচেয়ে কম বলে (১২+৬.২= ১৮.২ ওভার) শেষ হয়েছে ম্যাচ। বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আগে এত কম বলে বা কম রানে ম্যাচ শেষ হয়নি।
সমকাল: কী মনে হয়– এভাবে একটি দলের অলআউট হওয়ার কারণ কী?
রনি: ওই রকম কিছু না। প্রথম দিকে উইকেটে বোলাররা একটু সুবিধা পায়। ময়েশ্চার থাকে। ব্যাটাররা হয়তো ওটা ওভারকাম করতে পারছে না। মূলত বোলাররা ভালো বোলিং করছে।
সমকাল: বিপিএলে চট্টগ্রাম ভেন্যুতে বরিশালের পাঁচ উইকেট পেলেন, ঢাকা লিগে সাত উইকেট পেলেন এক ম্যাচে– রহস্য কী?
রনি: খেয়াল করলে দেখবেন, জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল), বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) ভালো বোলিং করেছি। বিসিএলে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারি ছিলাম। এই পারফরম্যান্স নিয়ে হয়তো আলোচনা হয় না। তবে আমি এখান থেকেই ছন্দ নিয়ে বিপিএলে গেছি। পেস বোলারদের ছন্দটা গুরুত্বপূর্ণ। বোলার বুঝতে পারে বোলিং করে মজা পাচ্ছে। মজা পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এই মৌসুমের শুরু থেকেই আমার ভালো হচ্ছিল। বিপিএলে রংপুরের নেটেও ভালো করছিলাম, সুযোগ আসছিল না। আত্মবিশ্বাস ছিল সুযোগ পেলে ভালো করব। অনেক দিন ধরে খেলছি, ১২ বছর হয়ে গেছে; এ পর্যায়ে বোঝা যায় শরীর কখন ইতিবাচক সাড়া দেয়। আমার মনে হচ্ছিল, আল্লাহ সামনে ভালো কিছু রেখেছেন। আমি চেষ্টা করছি, কখনও হতাশ হই না।
সমকাল: বোলিং নিয়ে বিশেষ কোনো কাজ করেছেন?
রনি: সুইংটা প্রথম থেকে ভালো ছিল। মাঝে বলের পেসটা কমে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়ি। রানআপ, পেস এবং হ্যান্ড সুইং নিয়ে কাজ করেছি। অব দ্য ফিল্ড পিচ যেন কুইক হয়। বোলিং করতে করতে আমরাও বুঝি না, এই ছোট ছোট জিনিসগুলো পরিবর্তন হয়ে গেছে। এত সূক্ষ্ম পরিবর্তন যে বোঝাও যায় না। একজন ভালো অভিজ্ঞ কোচ বা যে আগে থেকে আপনাকে চেনে বা দেখে তখন তার জন্য বোঝাটা সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশ টাইগার্সে রানআপ নিয়ে কাজ করেছি। নাজমুল ভাই আমাকে নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘তোমার রানআপটা জোরে হলে থ্রোটা সুন্দর হবে, বলে গতি বাড়বে।’ রংপুর রাইডার্সে তারেক ভাইয়ের সঙ্গে হ্যান্ড সুইং নিয়ে কাজ করেছি। হ্যান্ড সুইং ফাস্ট থাকলে অব দ্য ফিল্ডে ব্যাটার সময় কম পায়। বল একটু জোরে যায়। অল্প জোরে গেলেই ব্যাটারের ভুল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমার কাছে মনে হয় এই ছোট ছোট বিষয়গুলো আমার খুব কাজে দিয়েছে।
সমকাল: এই ভালো করার পেছনে কি জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন আছে?
রনি: হ্যাঁ, অবশ্যই। সব সময় স্বপ্ন দেখি জাতীয় দলে খেলব, টেস্ট খেলব। দেশের প্রতিনিধিত্ব করব। এটা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের চাওয়া। এই স্বপ্নটা দেখি বলে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই স্বপ্নটা দেখা যেদিন বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ক্রিকেট খেলে আনন্দ পাব না। আল্লাহ আমাকে পারফরম্যান্স করার সুযোগ দিচ্ছে। ভালো করতে থাকলে অবশ্যই ভালো কিছু হবে।
সমকাল: এবার লিগ কেমন হচ্ছে?
রনি: লিগ খুব ভালো হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হয়েছে অনেক। এক্সসাইটিং ম্যাচ বেশি হলে আনন্দ কাজ করে। আমরা সবাই জানি, ঢাকা লিগ অন্যতম সেরা। জমজমাট ক্রিকেট হয়। এবার একপেশে হচ্ছে না। শুধু ব্যাটাররা রান করছে, বোলাররা বেধড়ক মার খাচ্ছে। বোলাররা এবার ব্যাটারদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে। ছন্দে থাকা ব্যাটাররা রান পাচ্ছে। বোলার ও ব্যাটারদের মধ্যে যে লড়াইটা হচ্ছে, এটা উপভোগ করছি।
সমকাল: বোলাররা ভালো বোলিং করার কারণেই কি দলগুলো কম রানে অলআউট হচ্ছে?
রনি: আসলেই এবার বোলিং ভালো হচ্ছে। যারা সেরা ১০ জনে আছি, তারা কাছাকাছি। আকাশ-পাতাল পার্থক্য না। এ থেকে বোঝা যায়, অধিকাংশ দলের বোলাররা ভালো বোলিং করছে। আর উইকেটে একটু সুবিধা থাকে প্রথম ১০ ওভার। আমার মনে হচ্ছে, বোলাররা ওই সুবিধাটা নিচ্ছে। ব্যাটারদেরও চ্যালেঞ্জ থাকে ওই ১০ ওভার। আমার কাছে মনে হয়, এই ১০ ওভার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি দলের জন্য।
সমকাল: নিচের সারির দলগুলো নিয়ে তো সমালোচনা হচ্ছে?
রনি: একটা-দুইটা দল বাদ দিলে বাকিদের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। দুটি দলে বেশি তরুণ খেলোয়াড় খেলছে। প্রতিবার সব দলের তো সমান যায় না। এটা আসলে ছন্দের ওপর নির্ভর করে। কোন দলটা তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, যে দলগুলো দল হিসেবে খেলতে পারছে না, তারা রেজাল্ট পাচ্ছে না।
সমকাল: এখন তো সারা বছর ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকেন, টাইগার্সের অনুশীলন থাকে অফ সিজনে। এটা কতটা কাজে দিচ্ছে?
রনি: আমি ধন্যবাদ দিতে চাই বিসিবিকে। এই উদ্যোগটা ভালো একটা উদ্যোগ। কারণ এইচপির পরে একটা জ্ঞাপ হয়ে যায়। ঘরোয়া লিগে যারা পারফর্ম করে, তাদের অনুশীলনে থাকার সুযোগ থাকে না। ঢাকাতে অনুশীলন করার সুযোগ কম। টাইগার্স হওয়াতে কোয়ালিটি অনুশীলন করা যাচ্ছে। আমরা যারা স্বপ্ন দেখি জাতীয় দলে খেলব, তাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনুশীলন করা সম্ভব না। এটার জন্য একটা প্রক্রিয়া দরকার, ভালো কোচিং স্টাফ দরকার, সুযোগ-সুবিধার দরকার। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ টাইগার্স ভালো উদ্যোগ। এখানে সবকিছুই ভালোভাবে করানো হয়। গত দুই বছর আমরা যারা ক্যাম্পে ছিলাম, তাদের বেশির ভাগই পারফর্ম করছে।